কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম - মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম

প্রিয় পাঠক আসসালামুয়ালাইকুম। আপনি কি কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম , মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন। তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব , কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে। তাই আজকের পোস্টটি টেনে টেনে না পড়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। তাহলে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম - মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম
কবর জিয়ারত করার ফলে মানুষের অন্তরে পরকালের এবং মৃত্যুর ভয় সৃষ্টি হয় , গুনাহ এবং অসৎ কাজ করা থেকে বিরত রাখে। তাই আজ আমাদের এই বিশেষ আয়োজন , কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম ,মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম , কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা ,মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম , সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আজকের পোস্টটি ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

কবর জিয়ারত আমাদের ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। কবর জিয়ারত হচ্ছে নবী করীম { সা.} এর অন্যতম একটি সুন্নত। কবর জিয়ারত করার ফলে মানুষের অন্তরে পরকালের এবং মৃত্যুর ভয় সৃষ্টি হয়। কবর জিয়ারত করার ফলে মানুষের অন্তরে গুনাহ এবং অন্যায় কাজ থেকে সরে আসার মন মানসিকতা সৃষ্টি হয়। মনে আখিরাতের প্রতি উৎসাহ জাগে , তওবা করার মানসিকতা সৃষ্টি হয় , নেক আমল এবং সৎ কাজ এর প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়।
ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি বা নিয়ম কানুন না থাকলেও , পরে নবী করীম { সা.} কবর জিয়ারত করার অনুমতি প্রদান করেন স্লামালিকুম। কারণ কবর জিয়ারতের ফলে বান্দা দুনিয়াবি গুনাহ এবং পাপ কাজ ত্যাগ করে নেক আমল এবং সৎ কাজের দিকে অগ্রসর হয়। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে নবী করীম { সা.} বলেন আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , তোমরা এখন থেকে কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত করার ফলে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং দুনিয়াবীমুখতা এনে দেয়।{ হাদিস ইবনে মাজাহ; ১৫৭১}

কবর জিয়ারতের দোয়া

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস{ রা.} থেকে বর্ণিত নবী করীম { সা.} মদিনায় কবরবাসীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন।
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর , ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম , আনতুম সালাফুনা , ওয়া নাহনু বিল আসার।
অর্থঃ হে কবরবাসী , তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছো এবং আমরা পরে আসছি। { তিরমিজিঃ ১০৫৩}
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। নবী করীম { সা.} একবার একটি কবর জিয়ারত করতে গিয়ে এই দোয়াটি পাঠ করেন।
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম দ্বারা কওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহ বিকুম লা - হিকুন।
অর্থঃ মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই মিলিত হব।{মুসলিমঃ ২৪৯}

কবর জিয়ারতের নিয়ম

কবর জিয়ারতের নিয়ম হচ্ছে , সর্ব প্রথম অজু করে পবিত্র অবস্থায় কবরস্থানে প্রবেশ করে , উপরে উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে হবে। এরপর কবরবাসীর ঈসালে সওয়াবের জন্য সূরা ফাতিহা , দরুদ শরীফ , সূরা ইখলাস , আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হবে। এছাড়াও যে সকল দোয়া মুখস্ত আছে এবং যে সকল দোয়া আপনি সহজেই পড়তে পারবেন সেই সকল দোয়া পড়ে আপনি কবরবাসীর সওয়াব এবং মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন।
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে , বিশেষ করে জুমার দিন কবর জিয়ারত করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা বাবার জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য কবর জিয়ারত করবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং তাকে মা-বাবার সঙ্গে সৎ ব্যবহারকারী সন্তান হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে , কবরস্থানে গিয়ে কোন শিরিক কাজ করা যাবে না। যেমন সিজদা করা , কবরের মাটি ছুঁয়ে সালাম করা , কবরে মান্নত করা এগুলো একদম করা যাবে না। এমনকি কবরের পাশে কান্নাকাটি বা হা হুতাশ করা যাবে না।

মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে মা-বাবার জন্য সন্তানের দোয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান যদি মন থেকে মা-বাবার জন্য দোয়া করে সেটি সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। বিশেষ করে জুমার দিন মা বাবার কবর জিয়ারতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নবী করীম { সা.} ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন তার পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এবং সেই ব্যক্তি পিতা-মাতার অনুগত্যশীল সন্তান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কবর জিয়ারতের নিয়ম হচ্ছে , সর্ব প্রথম অজু করে পবিত্র অবস্থায় কবরস্থানে প্রবেশ করে , পাশে উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে হবে { উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর , ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম , আনতুম সালাফুনা , ওয়া নাহনু বিল আসার }। এরপর মা-বাবার এবং কবরবাসীর ঈসালে সওয়াবের জন্য সূরা ফাতিহা , দরুদ শরীফ , সূরা ইখলাস , আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হবে। এছাড়াও যে সকল দোয়া মুখস্ত আছে এবং যে সকল দোয়া আপনি সহজেই পড়তে পারবেন , সেই সকল দোয়া পড়ে আপনি মা বাবা এবং কবরবাসীর সওয়াব এবং মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন।

কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা

উচ্চারণঃ 

আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর , ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম , আনতুম সালাফুনা , ওয়া নাহনু বিল আসার।

উচ্চারণঃ 

আসসালামু আলাইকুম দ্বারা কওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহ বিকুম লা - হিকুন।
আপনি উপরে উল্লেখিত দুইটি দোয়ার যেকোনো একটি পাঠ করার পর , কবরবাসীর ঈসালে সওয়াবের জন্য দরুদ শরীফ , সূরা ফাতিহা , সূরা ইখলাস , আয়াতুল কুরশি , পাঠ করতে হবে। এছাড়াও আপনি যেই দোয়াগুলো খুব সহজে করতে পারবেন এবং আপনার যে দোয়াগুলো মুখস্ত আছে আপনি সেগুলো পড়ে কবরবাসীর জন্য দোয়া করতে পারবেন।

দরুদ শরীফঃ 

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ , ওয়ালা আলি মুহাম্মদ , কামা শাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম , ওয়ালা আলী ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ , ওয়ালা আলি মুহাম্মদ , কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিম , ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

সূরা ফাতিহাঃ 

আলহামদুলিল্লা হি রব্বিল আলামিন , আর রহমানির রাহিম , মালিক ইয়াওমিদ্দিন , ইয়া কানা বুদু ওয়া ইয়া কানাস্তাইন , ইহিদিনাস সিরাতুল মুস্তাকিম , সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম , গইরিল মাগদুবি আলাইহিম , অলাদ্দললিন , আমিন।

সূরা ইখলাসঃ 

কুলহু আল্লাহু আহাদ , আল্লাহুস সামাদ , লাম ইয়ালিদ , ওয়ালাম ইউলাদ , ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফু য়ান আহাদ।

আয়াতুল কুরশিঃ 

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু ওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম , লাতা খুঁজুহু সিনাতু ওয়ালা ্নাউম , লাহুমা ফিসসামাওয়াতি , ওমা ফিল আরদ , মাঞ্জাল্লাজি ইয়াস্ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি , ইয়ালামু ,মা বাইনি আইদিহিম , ওয়ামা খাল ফাহুম , ওয়ালা ইয়াহিত্তুনা বি সাইয়েম মিন ইলমিহি , ইল্লা বিমা শা আ , ওয়ারশিয়া কুরশিয়া হুসমাওয়াতি ওয়াল আরদ , ওয়ালা ইয়া হিদ্দু হিফজু হুমা , ওয়াহুয়াল আলিউল আজিম।

মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম

মহিলাদের কবর জিয়ারতের প্রসঙ্গে দুই ধরনের হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা {রা.} থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে , নবী করীম { সা.} কবর জিয়ারতকারী নারীদের ওপর অভিশাপ করেছেন। আরেকটি বর্ণনায় হযরত আলী {রা.} থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করীম { সা.} এর কন্যা ফাতেমা{রা.} প্রতি জুমাবারে তার চাচা হামজা {রা.} এর কবর জিয়ারত করতেন। 
তবে ইসলামী স্কলারদের মতে , যে হাদীসটিতে কবর জিয়ারতকারী নারীদের অভিশাপ করা হয়েছে , ওই হাদিসটি ইসলামের প্রথম দিকের যখন কবর জিয়ারত করা নিষেধ ছিল। এবং পরবর্তী সময়ে যখন নবী করীম { সা.} কবর জিয়ারতের অনুমতি দেন। তখন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অনুমতি দেন।
তবে শেষ কথা হচ্ছে মহিলারাও কবর জিয়ারত করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সেটি সম্পূর্ণ শরিয়া অনুযায়ী এবং পর্দার অনুগামী হতে হবে। পাশাপাশি পুরুষদের সংমিশ্রণ এড়িয়ে যেতে হবে। কবরের পাশে উচ্চস্বরে বিলাপ বা কান্নাকাটি করা যাবে না। নারীরা ধৈর্যহরা হয়ে যায় তারা বাড়ির আঙিনার বাইরে কবরস্থানে গমনের কারণে তাদের পর্দার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। 
তাই নারীদের কবর জিয়ারতে নি্উরুৎসাহিত করা হয়। তাই অন্য কোন প্রয়োজনে কবরস্থানে গমন করলে অতি নিচু স্বরে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়লে কোন অসুবিধা নেই। তবে সেটা অবশ্যই শরীয়াহ মতো পর্দার মাধ্যমে হতে হবে।

লেখক এর মতামত

পরিশেষে বলতে গেলে প্রিয় বন্ধুগণ প্রত্যেকটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বর্তমান সময়ে দুনিয়াবী নিয়ম এবং কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। আখেরাত নিয়ে ভাবি না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কবর আমাদের আসল ঠিকানা। কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আখেরাতের চিন্তা মানুষের মনে ধারণ হয়। কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আখেরাত এবং মৃত্যুর ভয় সৃষ্টি হয়। 
তাই প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত কবর জিয়ারত করা। তাহলে আখেরাতের চিন্তা মৃত্যুর ভয় এবং আল্লাহর রব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বেশ কার্যকরী হবে। ইসলাম সম্পর্কিত কোন তথ্য জানতে চাইলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আমাদের ওয়েবসাইটটিতে , ইসলামী , স্বাস্থ্য , তথ্য প্রযুক্তি সহ সকল ধরনের আপডেট নিউজ এবং ইনফরমেশন নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। এরকম তথ্যবহুল পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url